কিছু কবিতা || রাজন্য রুহানি
কিছু কবিতা  ||  রাজন্য রুহানি
প্রেমং তপিস্যামি

অসংখ্য আকাশে চন্দ্রদগ্ধ তারা এক
বিস্ফোরণে ছিটকে পড়ছে
স্পন্দিত দীঘির জলে

আশতবাজির পর
প্লেব্যাক ঘুমেরা কোরাস গাইছে
প্রত্যেক জন্মের ও মৃত্যুর অভিশপ্ত পারে

এর আগে ঋতকোষে মহাবিশ্বের গঠন নেই
চন্দ্রদগ্ধ তারাদের ইতিহাস নেই
প্রকৃতির জাগরণ নেই
বিস্ফোরণ নেই

কেবল দীঘির জলে পুনর্জন্মা ঢেউছক জেগে আছে

তুমি সে-দীঘির মালকিন

ওঁ হোমাগ্নি ওঁ ষড়ঙ্গ

নদীও মোহনা চায়, নইলে হৃদয়ে জাগে চর।
মনও শরীর চায়, নইলে দু চোখে বান ডাকে।
বৃক্ষতল ছেড়ে দিয়ে কেন মানুষ বেঁধেছে ঘর,
অদৃশ্য আত্মার রঙ তবে কোন মুখচ্ছবি আঁকে?

এতটাই ভান করো, মুছে যায় বেহুলার রেখা।
এতটাই গান করো, পীড়িত গোপনে কাঁদে একা।

শরীরের ভেদলিপি গড়ে তোলে মনের বাগান।
ছুঁয়ে দিলে ফুল ফোটে ঘ্রাণজন্মা প্রীত বাহুডোরে।
ঘুড়িরা যতই ওড়ে, ততই সুঁতোতে বাড়ে টান।
অন্ধকারে সূর্য গড়ে নবচক্ষু প্রত্যেক পাঁজরে।

মুখ ও মুখোশ জানে- সব প্রেমের গড়ন আছে।
সব কথা হার মানে প্রকৃষ্ট অনুভূতির কাছে।


স্বপ্নজট

নারী হয়ে গেছি আমি স্বপ্নের ভিতর;
দেখি, চারজন স্বামী, বেহারাও তারা,
সবখানে কাশফুল, নদী নেই কোনো,
বিচিত্র ঢালুর পথে হাড়ের কাহিনী
সুর করে গেয়ে যায়, কারা যেন কাঁদে
ভুলে গিয়ে মাংসকাম, কেউ যেন ফুল
একটি বৃক্ষের শাখে, মূলত সে ক্লীব।

মনে পড়ে, ছুঁয়েছিল অলঙ্ঘ্য প্রতাপ;
জড়ানো লতার সুখে বসন্ত গুঞ্জন,
যে সহিস নিয়ে এলো মূলের আরক,
পান করে দেখি, আমি নারী হয়ে গেছি
চারটি অচেনা কাঁধে, যেখানে মিশেছে
গ্রহাণুর আলোগান, ফোটনের প্রীতি
কনভার্টেড স্মৃতির, সে আমি, নারীর।

মানুষের ফাঁদে মানুষেরা

গুপ্তভয়ের পেখম দোলে এই নাগরিক কলহাস্যে অথচ কাঁটাচামচ মুখে তুলে দেয় বিধানের ফল গোলটেবিল বৈঠকে।

জন্মের পরেই ক্ষত নিয়ে কাতরায় যে ভূগোল তার দুই কান কেটে কোষাগার ভারী করে লোভাতুর পাছা যার জন্য প্রয়োজন মানুষের হাড় দিয়ে গড়া এক সিংহের আসন।

এভাবেই যোগফল ভাগ হতে হতে ক্ষীণ হয়ে গেছে আমাদের পরিবার।

চোখ ছিনতাই

হয়তো কোথাও লেগেছিল দাগ
জামার আস্তিন তাই নড়েচড়ে ওঠে; দেখি প্রজাপতি এক
নাক বরাবর ধেয়ে এলে চলে গেল বংশের মুকুট
আর আমি দেখলাম বালকের হাতে আমারই দুই চোখ
ভিন্ন চেহারার, একে অন্যের উপর দখলদারিত্বে ব্যস্ত
চোখনালীগুলো পরস্পর বিরোধী হলেও
একটা বিন্দুতে কব্জা করেছে মৃতের মানচিত্র
যেখানে রক্তজবার পিষ্ট হবার যন্ত্রণা ত্রিকাল পেরিয়ে গেছে
যেখানে প্রজাপতির কাহিনী জানেনা কেউ
যেখানে মুকুট নামে আর কোনো শব্দ নেই
এমন নিগূঢ় সত্যে চোখ ছিনতাই খুবই জরুরি ছিল
নইলে কখনো হাত তৃতীয় পা হয়, জানা হতো না বালকের।

বাবার গোলক ধাঁধা

তর্জনীটা বাবা :
উঁচিয়ে ধরলে জীবনসংগ্রাম
ঝুলিয়ে রাখলে সন্তানের পথ হাঁটা

কেবলার বিপরীতে যে আলোর লাফালাফি
মাবুদ সেখানে নারী থেকে নর হতে হতে কলম্বাস
ঘুরেফিরে স্বস্থানেই ফিরে আসা
যেখানে কেবলা ধরে রাখে পুনর্জন্মের সমুদ্র

কে আগে, আদম নাকি ইভ
এই তর্কের ভ্রমর কেবল ইভের বাগানেই বাঁচে

ফুলের সৌন্দর্যে সুপ্ত বাবা ইশারার বীজ


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান